কিডনি রোগের লক্ষণ ও কিডনি ভালো রাখার উপায়
আজকে আমাদের লেখালেখির বিষয় হচ্ছে কিডনি রোগের লক্ষণ ও কিডনি ভালো রাখার উপায় । কিডনি আমাদের শরীরে
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে একটি । কিডনি রোগ এমন একটি রোগ যা আমরা সহজে
বুঝতে পারি না । কিডনি রোগের আক্রান্ত হওয়ার শেষ পর্যায়ে গিয়ে লক্ষণগুলো
প্রকাশ পায় । কিডনি রোগের লক্ষণ ও কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে পারেন ।
কিডনি যদি একবার নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা আর ভালো হওয়ার কোন উপায় নেই । কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি কেউ বুঝতে পারে তাহলে সময়মতো চিকিৎসা নিলে কিডনি রোগ ভালো হয় ।পোস্ট সূচিপত্র : কিডনি রোগের লক্ষণ ও কিডনি ভালো রাখার উপায়
ভূমিকা
কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ । কিডনি ছাড়া কোন মানুষের
পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না । শরীরের গুরুত্বপূর্ণ যেসব অঙ্গ আমাদের শরীরকে সুস্থ
রাখে সচল রাখে তার মধ্যে কিডনি অন্যতম । আমরা আমাদের এই পোস্টে কিডনি কি, কি কাজ
করে , কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি, কিডনি খারাপের কারণ এবং কিডনি ভালো রাখার
বেশ কিছু উপায় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি । কিডনি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়
সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পোস্টটি পড়ুন ।
কিডনি কি
কিডনি বা বৃক্ক দেখতে অনেকটা সিমের বিচির মত । প্রত্যেকটি মানব শরীরে দুইটি করে
কিডনি রয়েছে । কিডনি দেখতে কিছুটা লালচে রঙের । আমাদের শরীরের পেছন দিকে কোমরে
ঠিক উপরে মেরুদন্ডের দুই পাশে দুটি কিডনির অবস্থান । দেরি আছে
কিডনির কাজ কি
কিডনি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে । নিম্নে কিডনির কাজগুলো উল্লেখ
করা হলো :
- কিডনি আমাদের রক্তে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থগুলো বের করে দিয়ে রক্তকে পরিশোধন করে ।
- আমরা যে খাবার খাই এই খাবারের সব অংশই আমাদের শরীরে কাজে লাগে না কিছু অংশ অতিরিক্ত থেকে যায় । এই অতিরিক্ত বর্জ্য গুলো কিডনি আমাদের শরীর থেকে বের করে দেয় ।
- আমরা প্রতিদিন যে পানি পান করি সবটুকু পানি আমাদের শরীরে কাজে লাগে না । এই অতিরিক্ত পানি কিডনি আমাদের শরীর থেকে প্রস্রাব তৈরির মাধ্যমে বের করে দেয় ।
- শরীরে হরমোন উৎপাদন করার মাধ্যমে কিডনি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ।
- কিডনি আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন করে থাকে
- কিডনি মানবদেহে ও রক্তে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে ।
কিডনি খারাপের লক্ষণ গুলো কি কি
কিডনি খারাপের লক্ষণগুলো খুব সহজে প্রকাশ পায় না । কিডনি যখন তার কাজগুলো করতে
ব্যর্থ হয় ঠিক তখনই তার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় । নিচে কিডনি খারাপের কিছু
লক্ষণ উল্লেখ করা হলো :
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া কিডনি খারাপের একটি অন্যতম লক্ষণ । কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেনা ।
- কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হয় । এবং প্রস্রাবে কটু গন্ধ থাকে ।
- প্রস্রাবের সাথে অনেক সময় রক্ত বের হতে দেখা যায় ।
- খাবার খেতে অরুচি হয় । খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না ।
- শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যায় । রোগী সবসময় শরীর ক্লান্ত অনুভব করে ।
- কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, হাত, পা ফুলে যায় । পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব না হওয়ার কারণে পানি জমে শরীরের এসব অঙ্গ ফুলে যায় ।
- রক্তে জমা বজ্র পদার্থ গুলো বের হতে না পারার কারণে অনেক সময় ত্বকে চুলকানি ও রেস উঠতে পারে ।
- রোগী সব সময় বমি বমি ভাব অনুভব করে । রক্ত জমা বজ্র পদার্থ গুলোর জন্য এমনটা হয় ।
আরও পড়ুন ঃ সাজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ
আমাদের কিছু ভুল অভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্য অনেক সময় কিডনি
খারাপ হয়ে যায় । আসুন জেনে নেই যেসব কারণে আমাদের কিডনি খারাপ হতে পারে ।
- যথেষ্ট পরিমাণে পানি খানা না খাওয়ার কারণে অনেক সময় কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
- অনেকেই আলসেমি করে বা অন্য কারণে সময় মতো প্রস্রাব করে না । সময়মতো প্রস্তাব না করলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায় ।
- তরকারিতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এবং পাতে কাঁচা লবণ খাওয়ার কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে ।
- অনেকেই সামান্য ব্যথার কারণে ব্যাথা নাশক ওষুধ খায় । ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যাথা নাশক ঔষধ খাওয়া কিডনি নষ্টের অন্যতম কারণ ।
- ধূমপান ,মদ পান এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার কারণে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে ।
- আমরা অনেকেই বাজারের প্রচলিত বিভিন্ন কোমল পানিও খেয়ে থাকি । এই কোমল পানি ও আমাদের কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে ।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ধীরে ধীরে কিডনি নষ্ট হয়ে যায় ।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদেরকে সর্বপ্রথম সচেতন হতে হবে । পরিমিত খাবার গ্রহণ
করতে হবে , অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন পরিহার করতে হবে । আরো বেশ কিছু বিষয় মেনে
চললে আমাদের কিডনি ভালো রাখতে পারি । সে উপায়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
- কিডনি ভালো রাখতে হলে আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে । একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লিটার পানি পান করতে হবে ।
- তরকারিতে লবণ কম খেতে হবে এবং খাবার পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে ।
- নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
- ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিসের ইনসুলিন এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না ।
- কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া পরিহার করতে হবে ।
- ধূমপান ,মদ পান এবং সমস্ত প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়া বাদ দিতে হবে ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে । ব্যায়াম করার সময় না পেলে অন্তত দিনে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে ।
শেষ কথা
কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল । আমরা যদি সুস্থ থাকতে চাই আমাদেরকে
অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে । শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে
জানতে হবে । আমরা চেষ্টা করেছি কিডনি রোগ সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে
। আশা করি আপনি কিডনি রোগ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন । আমাদের পোস্টটি
যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদেরকে শেয়ার করুন । কিডনি
রোগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে সাহায্য করুন । ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url